বাংলা বানানের নিয়ম
মুমূর্ষু √
মুমূ্র্ষ ×
সুষ্ঠু √
সুষ্ঠ ×
উপর্যুক্ত/ উপরিউক্ত √
উপরোক্ত ×
ভাষণ, শাষণ, বারণ, হরণ, কারণ √
পরীক্ষা √
পরিক্ষা ×
মাস্টার √, স্কুল √
মাষ্টার ×
মাতৃভাষা √
জন্ম, মৃত্যু, মৃত
পরিষ্কার
কনিষ্ঠ
সুস্থ
কাঁচা
ধাঁধা
পাঁচ
পঁচিশ
পঁয়তাল্লিশ
পঁয়ত্রিশ
সাঁইত্রিশ
পঁচানব্বই
পঞ্চান্ন
বিজ্ঞান
সঞ্চয়
ঋণ
নোট: যে শব্দ ইংরেজি শব্দ বাংলায় বানান করে লেখা হয়, সেগুলোতে 'স' হবে, কখনও ষ, শ হবেনা।
বাংলা বানানের প্রায়োগিক কিছু ভুল। যেমন:
০১. ‘অত্র’ শব্দের অর্থ এখানে। তাই ‘অত্র’ বললে কখনো ‘এই’ বুঝায় না। অথচ অফিস আদালতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখালেখির ক্ষেত্রে এই অফিস/ এই বিদ্যালয় অর্থে অত্র অফিস/ অত্র বিদ্যালয় লেখা হয়ে থাকে, যা ভুল।
০২. ‘কাল’ শব্দের বিশেষণ হলো ‘কালীন’।
এর অর্থ- সময়ে। অথচ, অনেকেই অধ্যয়নকালীন, যুদ্ধকালীন, চলাকালীন প্রভৃতি শব্দের পরে সময় লিখে থাকেন। ফলে, ‘চলাকালীন সময়ের’ অর্থ দাঁড়ায় চলার সময়ে সময়ে। তাই ‘কালীন’ এর পরে সময় লেখা বাহুল্য ও অর্থহীন।
০৩. আমরা মোহাম্মদ/মুহাম্মদ/ ডাক্তার/ডক্টর প্রভৃতি শব্দের সংক্ষেপণের সময় মোঃ / মুঃ / ডাঃ / ডঃ প্রভৃতি লিখে থাকি। আসলে বিসর্গ (ঃ) একটি বর্ণ, সংক্ষেপচিহ্ন নয়। ইংরেজির মতো বাংলাতেও একবিন্দু (.) কে সংক্ষেপণের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই সংক্ষেপনের সময় বিসর্গ ব্যবহার করা ভুল। বিসর্গ ব্যবহার করলে এগুলোর উচ্চারণ হয়- মোহ্/মুহ্/ডাহ্/ডহ্। সুতরাং বিসর্গ পরিহার করে লেখা উচিত মো./ মু./ ডা./ ড. প্রভৃতিরূপে।
০৪. বাংলাদেশি,বাঙালি, ইংরেজি, আরবি, জাপানি, ইহুদি প্রভৃতি বানান অনেকেই বাংলাদেশী, বাঙালী, ইংরেজী, আরবী, জাপানী, ইহুদী প্রভৃতিরূপে লিখে থাকেন, যা ভুল। কেননা, জাতি ও ভাষার নামের শেষে ই-কার ব্যবহৃত হয়। তাই হ্রস্ব ই-কার দিয়েই উল্লিখিত বানানগুলি লিখতে হবে।
০৫. প্রাণী, শ্রেণী, মন্ত্রী, শশী প্রভৃতি বানানে ঈ-কার ব্যবহার করা হলেও এগুলো যখন সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে বসে তখন ঈ-কার স্থলে ই-কার হয়। যেমন : প্রাণিবিজ্ঞান, মন্ত্রিসভা, শশিকর, শ্রেণিসমেত প্রভৃতি।
০৬. ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত হলে পদের শেষে ঈ-কার স্থলে ই-কার হয়। যেমন : প্রতিযোগী + তা = প্রতিযোগিতা, উপকারী + তা = উপকারিতা।
০৭. বিদেশি শব্দে ‘ন’ ও ‘স’ ব্যবহৃত হয়। যেমন : ট্রেন, জাপান, জার্মানি, কোরান, পাকিস্তান, টেন্ডার, কিন্ডার, মাস্টার, স্টুডিও, স্টুডেন্ট, ফটোস্ট্যাট প্রভৃতি।
০৮. নিঃ, দুঃ, বহিঃ, আবিঃ, চতুঃ, প্রাদৃঃ এগুলোর পরে ক, খ, প, ফ থাকলে ঃ (বিসর্গ) স্থানে ষ হয়। যথা : নিঃ + কাম = নিষ্কাম, দুঃ + কর = দুষ্কর, আবিঃ + কার = আবিষ্কার, নিঃ + কণ্টক = নিষ্কণ্টক।
০৯. সমাসবদ্ধ পদের ক্ষেত্রে প্রথম পদের শেষে ই, উ, বা ঋ এবং ও থাকলে পরবর্তী পদের আদ্যে ষ হবে। যথা : যুধিষ্ঠির, সুষমা, গোষ্ঠী, সুষম ইত্যাদি।
০৮. প্র, পরা, পূর্ব ও অপর -এই চারটির পরবর্তী অন্য শব্দের দন্ত্য ‘ন’ মূর্ধন্য ‘ণ’ হয়। যথা : প্রহ্ণে, পরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ ইত্যাদি।
০৯. পর, উত্তর, চান্দ্র, নার, রাম শব্দের পর আয়ন শব্দের দন্ত্য ‘ন’ মুর্ধন্য ‘ণ’ হয়। যথা : পরায়ণ, উত্তরায়ণ, চন্দ্রায়ণ, নারায়ণ, রামায়ণ ইত্যাদি।
১০. অনেকেই ভর্ত্তি কার্য্য, সূর্য্য, শর্ত্ত, কর্ম্ম প্রভৃতি বানান লিখে থাকেন। অথচ রেফের পর কখনও ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হয় না। তাই লিখতে হবে- ভর্তি, কার্য, সূর্য, শর্ত, কর্ম প্রভৃতিরূপে।
১১. বিশেষণবাচক ‘আলি’- প্রত্যয়যুক্ত শব্দের শেষে ই-কার হবে।
যেমন : সোনালি, রূপালি, বর্ণালি।
১২. অর্থভেদ বোঝাবার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বর ব্যবহার করতে হবে। যেমন : কি (অব্যয়), কী (সর্বনাম), তৈরি (ক্রিয়া), তৈরী (বিশেষণ), নিচু (নিম্ন অর্থে), নীচু (হীন অর্থে), কুল (বংশ অর্থে), কূল (তীর অর্থে)।
১৩. অনেক জায়গায়ই ক্রমশ, প্রধানত, মূলত, সাধারণত প্রভৃতি বানান এভাবে (ক্রমশঃ , প্রধানতঃ , মূলতঃ , সাধারণতঃ) লেখা হয়ে থাকে। মূলত পদান্তে বিসর্গ বসে না।
১৪. ব্যঞ্জনবর্ণে উ-কার ( ু ), ঊ-কার ( ূ ) ও ঋ-কারের একাধিক রূপ পরিহার করে এই কারগুলি বর্ণের নিচে যুক্ত করে লিখতে হবে। যেমন : শুভ, রূপ, হৃদয়।
১৫. বিশেষণবাচক পদ (গুণ, সংখ্যা বা দূরত্ব ইত্যাদি বাচক) হলে আলাদা বসবে। যেমন : এক জন, কত দূর, সুন্দর ছেলে।
১৬. নঞর্থক শব্দ পৃথকভাবে বসবে। যেমন : ভয়ে নয়, হয় না, আসে নি, কাছে নেই।
১৭. টা, টি, খানা, খানি, গুলি, গুলো, রা, এরা, গণ, বৃন্দ, সমূহ- প্রভৃতি শব্দগুলো কোনো বচনের পরে আমরা অনেক সময় আলাদা করে লিখে থাকি। অর্থাৎ বই গুলি, গ্রন্থ সমূহ, শিক্ষক গণ প্রভৃতিরূপে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সবই জোড়া লাগবে। তাই লিখতে হবে- বইগুলি, গ্রন্থসমূহ, ছেলেরা, শিক্ষকগণ, অতিথিবৃন্দ প্রভৃতি।
১৮. ‘আগামী’ ও ‘গত’ শব্দের পরের শব্দ সব সময় পৃথক বসবে। যেমন : আগামী কাল, আগামী দিন, গত কাল, গত বছর প্রভৃতি।
১৯. ‘বিশেষ’ শব্দে যদি প্রকার বা ভেদ বুঝায়, তা হলে পূর্ববর্তী শব্দের সাথে জোড়া লাগবে। যেমন : অবস্থাবিশেষ, পুষ্পবিশেষ, গ্রন্থবিশেষ প্রভৃতি ।
২০. ‘ভাবে’ শব্দটি পূর্ববর্তী শব্দের সাথে জোড়া লাগবে। যেমন : ভালোভাবে, অদৃশ্যভাবে, ঘনিষ্টভাবে প্রভৃতি।
২১. ‘মতো’ শব্দ দ্বারা যদি অনুযায়ী/অনুসারে বুঝায়, তবে পূর্ববর্তী শব্দের সাথে জোড়া লাগবে। যেমন : ইচ্ছেমতো, কথামতো প্রভৃতি।
২২. ‘সব’ এবং ‘সারা’ উভয়ই সমগ্র/সমস্ত/সর্বত্র ইত্যাদি অর্থ প্রকাশ করে। শব্দ দুটি সাধারণত পৃথক বসে। যেমন : সব অশান্তি, সব ঘটনা, সব লোক, সারা অঙ্গ, সারা দিন। ব্যতিক্রম : সবশেষে, সবকিছু, সারাক্ষণ প্রভৃতি।
২৩.‘মাত্র’ শব্দের অর্থ প্রত্যেক/শুধু/পর্যন্ত/তখনই প্রভৃতি বোঝালে এর পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে জোড়া লাগবে। যেমন : আসামাত্র, এইমাত্র, একমাত্রা, একটিমাত্র, কিছুমাত্র, বলামাত্র প্রভৃতি। ব্যতিক্রম : দশ টাকা মাত্র, একটা কলম মাত্র প্রভৃতি।
২৪. ‘প্রতি’ শব্দ দ্বারা যদি ব্যাপ্তি বোঝায়, তবে এর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী শব্দ পৃথক বসবে না। যেমন : প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতিবছর, প্রতিমুহূর্ত, ছাত্রপ্রতি, জনপ্রতি ইত্যাদি। ব্যতিক্রম : আমাদের প্রতি, জনতার প্রতি প্রভৃতি।
২৫.‘পর’ শব্দ দ্বারা যদি পরের/পরবর্তী/অন্য/ভিন্ন প্রভৃতি অর্থ প্রকাশ করে, তবে পরবর্তী শব্দটির সঙ্গে জোড়া লাগবে। যেমন : পরকাল, পরদিন, পরনারী, পরজীবী, পরদেশ প্রভৃতি।
২৬. ‘নানা’/‘নানান’ শব্দ পরবর্তী শব্দ থেকে পৃথক বসবে। যেমন : নানা অসুবিধা, নানা ঝামেলা, নানান পথ প্রভৃতি।
২৭. ‘কাল’ ও ‘ক্ষণ’ শব্দের পূর্ববর্তী বিশেষণ আলাদা না বসে একসঙ্গে বসবে। যেমন : একাল, এতকাল, বহুকাল, কতকাল, কতক্ষণ, বহুক্ষণ ইত্যাদি।
২৮. ‘উদ্দেশ’ শব্দ দ্বারা হদিস, লক্ষ্য, খোঁজ বুঝায়। আর ‘উদ্দেশ্য’ শব্দ দ্বারা অভিপ্রায় বা মতলব, তাৎপর্য, প্রয়োজন প্রভৃতি বুঝায়। যেমন :
কার উদ্দেশে একথা বলা হল কেউ বুঝতে পারল না।
লোকটা উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কাজ করে না।
২৯. লক্ষ হলো ১০০ হাজার। আল লক্ষ্য অর্থ উদ্দেশ্য বা দেখা। তবে লক্ষ্য বানানের সাথে যদি ‘ই’ যোগ হয়, তখন (্য) য-ফলা উঠে গিয়ে ‘লক্ষই’ হয়। যেমন :
আমার পাঁচ লক্ষ টাকা দরকার।
আমাদের লক্ষ্য উন্নতি করা।
নিজের শরীরের দিকে সে লক্ষই করে না।
৩০. ‘বোধ হয়’ শব্দের অর্থ মনে হয় এবং ‘বোধহয়’ অর্থ সম্ভবত। যেমন :
আমার বোধ হয় সে পৌঁছে গেছে।
সে বোধহয় আজ অফিসে যাচ্ছে না।
বাংলা বানানের ক্ষেত্রে এরকম আরও অনেক ছোটখাট প্রায়োগিক ভুল শুধু আমাদের সামান্য সচেতনতার অভাবে হয়। আমাদের রক্তে কেনা ভাষার প্রতি আমরা যদি আর একটু সচেতন ও যত্নশীল হই তাহলে ভুল বাংলা বানানের ভুল থেকে আমরা সহজেই মুক্তি পেতে পারব।
আসুন আমরা বাংলা ভাষার চর্চা করি এবং বাংলা বানানের প্রতি যত্নবান হই
বর্তমানে বাংলা কমিউনিটি ব্লগের অনেক ছড়াছড়ি । সেই সুবাদে অনেক সৃজনশীল কবিতা , গল্প, প্রবন্ধের প্রসার এবং পরিচিতি ঘটছে খুব সহজেই । সেই সাথে বাংলা ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহার ও প্রসার বাড়ছে । অতীতে যা সম্ভব ছিলো না আজ তাই সম্ভব হতে দেখছি চোখের সামনে । গুগল সার্চ ইঞ্জিনে কোন লেখা নিয়ে সার্চ দিলেই দেখা যায় কি সুন্দর বাংলা লেখাগুলোর লিংক আসছে ।
শুধু কি বাংলা ভাষাতে কবিতা , গল্প কিংবা প্রবন্ধ লিখলেই আমাদের লেখা স্বার্থকতা পাবে ?
লেখার স্বার্থকতা নিহিত থাকে লেখার মূলভাব , সৌন্দর্য ও বানানের প্রতি যত্নের উপর । আমি মূলত বানানের কথাটাই লিখতে চাই ।
কেউ বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না , আমি কখনো কোন বানান শিখার জন্য মুখস্থ্য করিনি । আমি যখনই যা পড়তাম সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম । একটা লেখা পড়ার সময় যদি মনোযোগ দিয়ে পড়ি তাহলে সেই লেখার প্রতিটি বানান মনের মধ্যে গেঁথে যায় , আলাদা করে আর বানান মুখস্থ্য করতে হয় না । অন্তত আমার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে ।
আমার কাছে মনে হয় বাংলা ভাষার প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা থাকলে বাংলা বানান এমনিতেই ভুল হবে না । সেটা কি বাংলা , কি ইংরেজি যেকোন ভাষাই হোক না কেন ।
যেহেতু বাংলা কমিউনিটি ব্লগগুলোর লেখকদের লেখার দুরবস্থা দেখে হতাশ সেহেতু বাংলা বানান নিয়ে কিছু কথা লিখবো । আশা করি অনেকের কাজে দিবে । এবং বানানের প্রতি আরও যত্নবান হবেন ।
বাংলা বানান সঠিকভাবে লেখার জন্য ব্যাকরণ এর সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিন্তু তাই বলে আমি বলছি না যে ব্যাকরণ শিখেই বাংলা লিখতে হবে । আমরা জন্মের পর থেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি , বড় হওয়ার পর বাংলা ব্যাকরণ এবং এর বিভিন্ন শাখার সাথে পরিচিত হই । কথা বলা র জন্য ব্যাকরণ এর প্রয়োগ করতে হয় না । কারণ আমরা যা বলি তার বেশিরভাগই প্রচলিত কথা ।
প্রচলিত কথা দিয়ে কোন কিছু যেমন , কবিতা , গল্প, প্রবন্ধ লিখলে মূল ভাবটা সহজে বুঝতে পারবো না । কিংবা দেখা যাবে যে মূল ভাবটা লেখার সাথে সাথেব চলে আসছে । যা কবিতা , গল্প, প্রবন্ধের জন্য গ্রহনযোগ্য নয় ।
তবে স্মৃতিচারণ কিংবা ভ্রমণকাহিনী লেখার বেলায় সেই প্রচলিত কথা অনুসারে সাজিয়ে লিখলেই চলে ।
যদি গল্প এভাবে লিখতে বসি তাহলে সবাই বলবে এটা গল্প হয়নি । সেটাই স্বাভাবিক ।
তেমনি বানানের ভুল ব্যবহারের কারণে এক অর্থ আরেক অর্থে রুপান্তরিত হয় । আমি কিছু উদাহরনের সাহায্যে ব্যাপারগুলো ধরিয়ে দেবো ।
শব্দের সঠিক প্রয়োগ জনিত ভুল ,
১. ফলগাছটা এখনো অপরিণীত ( অপরিণত ) । তাহলে অর্থটা কি দাড়াবে ,
অপরিণত -যা পরিণত হয় নি
অপরিণীত - অবিবাহিত ।
২. চর - নদীর চড়া
চড় - চপেটাঘাত ।
৩. নিতি - রোজ
নীতি -নিয়ম
৪. জোড় - যুগ্ম
জোর - শক্তি
৫. শব - মৃতদেহ
সব - সকল
আমি এখানে কিছু অর্থ তুলে ধরলাম । কারণ প্রায় দেখি এরকম কাছাকাছি শব্দের এক জায়গার প্রযোগ আরেক জায়গায় ।
আপনারাই দেখুন তো সামান্য একটু ভুল এর কারণে আপনার মূল লেখারটার অর্থ কি হয়ে যায় ।
যদি সম্ভব হয় বাচ্চাদের ব্যাকরণ বইটা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে দেখুন । পারলে বাচ্চাদেরকে নিজে পড়ান ব্যাকরণ তাতে আপনার বাসার বাচ্চা যেমন ব্যাকরন এ পারদর্শী হবে তেমনি আপনারাও আপনাদের ভুলে যাওয়া অংশটুকু চর্চার মাধ্যমে ভুল ভ্রান্তিগুলো খুব সহজেই বের করতে পারবেন । আর বানান ভুল সেটা হওয়ার সম্ভাবনাটাও কমে যাবে ।
টাইপিং মিসটেক জনিত ভুল ,
এই ধরনের বানান ভুল হয় না এসন কথা কেউ বলতে পাবে না । টাইপিং এর মিসটেক জনিত কারণে মাঝে মাঝে আরও ভুল হয় । এটা অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে লেখার কারণে হয়ে থাকে । তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে , কি লিখছি সেটার দিকে খেয়াল থাকে না । শুধু খেয়াল থাকে সময়ের দিকে । এই সময়ের মধ্যে শেস করতে হবে । এরকম তাড়াহুড়ো জনিত ভুল প্রায় সবার ক্ষেত্রেই কম বেশী হয়ে থাকে ।
বানান না জানা জনিত ভুল ,
অনেক সময় দেখ যায় যে আমি হয়তো এই শব্দ টার সঠিক বানান জানি না । তাই যে ভাবে মনে আসছে যা মনে আসছে তাই লিখছি । মনে রাখতে হবে বাংলা ভাষা আমার ব্যাক্তিগত সম্পদ নয় যে তাকে যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করবো ।
কিছু নমুনা দেখুন ,
এম্নিতেই >> এমনিতেই
এক্টা >>>একটা
এমন অনেক বানান ভুল করে অনেকে লেখে । এগুলো আমি বিভিন্ন ব্লগে দেখেছি ।
বাংলা ভাষার চর্চা ব্যতিরেকে বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে লেখা সম্ভব নয় । তাই সবার কাছে অনুরোধ রইলো বানানের প্রতি যত্নবান হউন । এই ভাষা আমরা অর্জন করেছি ভাইদের রক্তের বিনিময়ে । আসুন আমরা সবাই বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং শুদ্ধ করে লেখার চেষ্টা করি ।
বানান বিড়ম্বনা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা
লিখেছেন নির্বাসিত স্বপ্ন, রাত ১২: ৪৭, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Share
আমাদের যেন আর বিড়ম্বনার শেষ নেই। ঘরে ও ঘরের বাইরে যেখানেই থাকিনা কেন বিড়ম্বনা প্রতি নিয়ত আমাদের পিছু ধাওয়া করে বেড়ায়, আমরা যতই পালিয়ে বাঁচতে চাই ততই যেন বিড়ম্বনার ফাঁদে আটকা পড়ি। আগেকার সময়ে ক্যাসেট প্লেয়ারে যখন গান শুনতাম তখন প্রিয় গান বাজাতে গেলেই ক্যাসেটের ফিতা হুইলে আটকে যেত সে এক মহা বিড়ম্বনা তারপর এলো কমপেক্ট ডিস্ক বা সি,ডি। ভাবলাম এবার বুঝি ফিতা প্যাঁচানোর যাতাকলে আর পড়তে হবে না। কিন্তু না সেখানেও না ঝামেলায় পড়তে হয়। স্ক্র্যাচ পড়া সিডি ফিতা ছাড়াই আটকে থাকে! তেমনি ভাবে আমাদেরকে অনেক কিছুতেই আটকাতে হয়, হতে হয় নানাবিধ বিড়ম্বনার শিকার। ঠোঁট নেড়ে কথা বলতে গেলে আমাদের খুব একটা সমস্যা হয়না, কোন রকমে উচ্চারণ করতে পারলেই মুক্তি লাভ করা যায়। অনেকের উচ্চারণে আঞ্চলিকতার টান থাকে। আঞ্চলিকতার টান এড়াতে পারলেই হলো, না এড়ালেও সমস্যা নেই মনের ভাব ঠিকই প্রকাশ করা যায় কিন্তু মনের কথা গুলো কাগজে কলমে প্রকাশ করতে গেলেই বানানের ঝক্কি পোহাতে হয় রীতিমতো আমার মতো অনেককেই। মুখের কথা বাতাসে মিলিয়ে যায় বলেই হ্রস্ব ইকার দীর্ঘ ইকার বা তিন শ (শ, স, ষ) এর জ্বালাতন সহ্য করতে হয়না, কিন্তু লিখতে গেলেই আকার, ইকার, কিংবা তালব্য শ, না দন্ত স হবে তা কালির আঁচড়ে এঁকে দিতে হয়। তাইতো আমার মতো আঁকিয়েদেরকে অংকন করে দিতে গেলেই ন, স, হ্রস্ব ইকার, দীর্ঘ ইকার, যফলা বা সিঙ্গেল ডাবল অক্ষরে ফাঁদে আটকা পড়তে হয়। একসময় বলা হতো "ঘুঁঘুঁ দেখেছো ফাঁদ দেখোনি" কিন্তু আজকাল আমরা ম্যাগনিফাই গ্লাস ছাড়াই ফাঁদ দেখতে পাই কিন্তু ফাঁদ পাতানো ঘুঁঘুঁরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় অণুবীক্ষণ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও তাদের অবস্থানের লক্ষণ আমরা ঠেঁর পাইনা।
নব্বইয়ের দশকেও বিভিন্ন পেপার পত্রিকাতে দেখেছি 'সন্ধ্যা', 'পর্য্যন্ত', 'বিপর্য্যয়' লিখতে গেলে যফলার উপর নির্ভর করা হতো কিন্তু ইদানিং কালে সন্ধ্যা-তে কেউ কেউ যফলা ব্যবহার করলেও বাকি দুইটা শব্দ থেকে যফলাকে উষ্টা মেরে বের করে দেয়া হয়েছে। 'পর্য্যন্ত' এবং 'বিপর্য্যয়' আজ পুরোপুরি যফলা মুক্ত হয়ে অভিধানেও নিজের অবস্থান পাকা পোক্ত করে ফেলেছে। তবে 'সত্য'-তে যেমন যফলা আছে তেমনি আজও 'মিথ্যা'-তেও যফলা স্বগৌরবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। তেমনি ভাবে আরোও কিছু শব্দে যফলাকে যথাযত ভাবেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে আমাদের প্রজন্মে যেভাবে যফলা খেদাও আন্দোলন শুরু হয়েছে সে আন্দোলন যদি বাঁধাগ্রস্থ না হয় তবে একদিন যফলা প্রজাতিটিকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে এটা নিশ্চিন্তেই বলা যায়।
সংস্কার শব্দটার সাথে আমরা বেশ পরিচিত। রাস্তা-ঘাট সংস্কার, বাড়ি-ঘর সংস্কার ইত্যাদি। মেরামতের বিকল্প বা সমার্থক শব্দ হিসেবে এই আধুনিক জমানায় সংস্কার শব্দটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিছু দিন আগেও আমাদের মহান রাজনীতিবিদরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কিল গুঁতো খেয়ে রাজনীতির পালেও সংস্কারের হাওয়া লাগিয়েছিলেন। কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আমাদের বানান রীতিতে আজ পর্যন্ত কোন সংস্কারের হাওয়া লাগেনি যেকারণে কিছু কিছু কঠিন শব্দ সঠিক ভাবে আমার মতো অনেকেই লিখতে পারেন না বলেই পণ্ডিত মহলে তিরস্কৃত হতে হয় প্রায়শই। তবুও অনেকেই কোন রীতি রেওয়াজের তোয়াক্কা না করেই যে যার মতো করে বুক ফুলিয়ে নানান শব্দের বানান নিজস্ব ষ্টাইলেই লিখে থাকেন। এক কালে আমাদের সামাজিক বন্ধন বড়ই সুদৃঢ় ছিলো। আমরা পাড়া প্রতিবেশীরা বেশ সহনশীল হয়ে সুখে দুঃখে একে অন্যের পাশে থাকতাম। কালের পরিক্রমায় আজ আমাদের সেই সামাজিক বন্ধন অতটা সুদৃঢ় না থাকলেও আমাদের বর্ণমালার অক্ষরগুলি আগের মতোই একে অন্যের ঘাড়ে শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারে। বিভিন্ন অক্ষরের এই পারস্পরিক সহযোগীতায় এখনো অনেক শব্দ ঠিকে আছে আগের মতোই কিন্তু 'ব' এর ঘাড়ে 'ব' বসাতে অনেকেরই আপত্তি দেখা যায় তাইতো 'সর্ব্বদা', 'সব্বাই' থেকে একটা 'ব'-কে বহিষ্কার করে দেয়া হয়েছে অঘোষিত ভাবেই। সান্ত্বনা শব্দের 'স' আর শেষ 'ন' এর মাঝখানে ঘেঁষা ঘেঁষি করে 'ন' 'ত' এবং 'ব' সমঝোতার ভিত্তিতে ঠাঁই করে নিয়েছে। এই তিনটি অক্ষর 'ন্ত্ব' একত্রিত হয়ে সান্ত্বনার মাঝে সান্ত্বনা দিতে চাইলেও এই যুগের অনেকের মনে অশান্তির সৃষ্টি করে যাচ্ছে। পারত পক্ষে অনেকেই 'ন্ত' এর নিচে 'ব'-কে ব্যবহার করতে চাননা এখানে 'ব'-কে বাহুল্য মনে করা হয়। সান্ত্বনা থেকে 'ব' বিতাড়ন করলে সান্ত্বনাটা হালকা হয়ে গেলে অনেকেই হয়তো তাতে সান্ত্বনা পেতেন কিন্তু ঐতিহ্যে রক্ষার খাতিরে সান্ত্বনা'য় আর সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। 'দত্ত' বাবু সেই আদিকাল থেকেই 'ও' এর উপরে মাত্রার শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে জমজ 'ত'-এ রূপান্তরিত হয়ে যান। কিন্তু কোন অপরাধের শাস্তি স্বরূপ তিনি 'ব' হারা হলেন তা আমার বোধগম্য হয়নি। 'দত্ত' বাবু 'ব' বঞ্চিত হলেও 'সত্ত্ব'টা 'ব'-এর সত্ত্ব নিজের ভাড়ারে ঠিকই রেখে দিয়েছে। উচ্চারণের দৃষ্টিতে বিচার করতে গেলে দেখি 'ত্ত্ব' বা ত্ত এর মধ্যে কোন প্রভেদ খোঁজে পাইনা, দুজনকেই একই দৃষ্টিতে দেখতেই হয়। অথচ উল্লেখিত দুটি শব্দে 'ব'এর বন্টন যে দৃষ্টি কটু তা ক'জনের দৃষ্টিতে আঘাত হানে কে জানে।
আমার মতো অনেকেই বানান বিড়ম্বনার শিকার হয়ে আছেন। কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তার নির্ধারণ করতে হিমশিম খেতে হয়। কেউ 'লিখেন', কেউ 'লেখেন', কেউ 'জিলা', কেউ 'জেলা' আবার বাংলার তিন অবস্থা দেখে (বাংলা, বাঙলা, বাঙ্গলা) আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ি, অনেক সময় মগজ ঠিক মতো কাজ করেনা কখন কোন বাংলা'র প্রয়োগে কে আবার রাগ গোঁস্যা করে বসেন। কুমির/কুমীর, বাড়ি/বাড়ী, গাড়ি/গাড়ী, পাখি/পাখী এসব শব্দে হ্রস্ব ইকার ও দীর্ঘ ইকার অনেকটা ফ্রি ষ্টাইলে ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও কারো মাথা ব্যথা খুব একটা চোখে পড়েনা। তেমনি ভাবে এলো/এল, ভালো/ভাল, জুতো/জুতা, অংগ/অঙ্গ, রং/রঙ, ঢং/ঢঙ, আজান/আযান, রোজা/রোযা, যাকাত/জাকাত, আহমদ/আহমেদ/আহম্মদ/আহাম্মদ, খোদা/খুদা সহ আরোও অনেক শব্দ আছে যা যে যার মতো করেই লিখেন থাকেন। বানান নিয়ে এতো জগাখিচুড়ি কারবার পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। কোন কোন পণ্ডিত ব্যক্তি হয়তো আমার দিকে তর্জনী উঁচিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলতেই পারেন বানানের তারতম্য শুধু বাংলাতেই নয় ইংরেজীতেও দেখা যায়। আমিও স্বীকার করছি ব্রিটিশ ইংরেজীর সাথে আমেরিকান ইংরেজীর খুব অল্প সংখ্যক শব্দে বানানের এই হেরফের দেখা যায়। যেমন ব্রিটিশরা লিখেন Programme সেখানে আমেরিকানরা ওই বানানে ছুরি চাকু চালিয়ে কিছুটা হালকা করে লিখেন Program এমনি ভাবে ব্রিটিশের Licence আমেরিকানদের কাছে হয়ে যায় License, তেমনি করে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের বানানে কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু ব্রিটিশ বা আমেরিকান পরিবারের সদস্যরা কি আমাদের মতো জনে জনে পৃথক পৃথক বানানরীতি আবিষ্কার করে যাচ্ছেন ইচ্ছে মতো ? সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত আমাদের এই বাংলা ভাষার বর্তমান বেহাল অবস্থা দেখে জানিনা তাদের আত্মা কেমন করছে।
এবার সঙ্গত কারণে ভাষা ও শব্দ নিয়ে কিছু শব্দ ব্যয় করতে ইচ্ছে করছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে তিনি তার কবিতায় অন্ত্যমিল সৃষ্টির লক্ষ্যে যুৎসই শব্দ যখন খোঁজে পেতেন না তখন তিনি নিজে নিজেই কিছু শব্দের সৃষ্টি করে গেছেন। তার সৃষ্ট শব্দাবলী আজ সর্বজন স্বীকৃত এমন কি অভিধানের পাতায়ও তার তৈরী করা শব্দ গুলো মর্যাদার সাথে স্থান করে নিয়েছে। তার জীবদ্দশায় তার সৃষ্ট শব্দাবলীর বিপরীতে কেউ তর্জনী উঁচিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতা দেখায়নি আর এই সময়ে ত তিনি ভগবানের কাতারে চলে গেছেন তিনি রীতিমত পূজনীয়। তার বিপরীতে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ পন্ডিত বহু ভাষাবিদ ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র নাম এপ্রজন্মের কতজন ছেলে মেয়ে জানে তা প্রশ্নের বিষয়। অথচ তিনিই বাংলা ভাষাকে সর্বাধিক সমৃদ্ধ করে গেছেন, এই সত্যটা কি কেউ অস্বীকার করার ক্ষমতা রাখে ? ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজ কেবলই ইতিহাসের পাতায় আছেন কিন্তু আমাদের প্রজন্মের মনের মধ্যে নেই। ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছাড়াও ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন, ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, ডঃ প্রবোধ চন্দ্র বাগচি, ডঃ রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ডঃ সুকুমার সেন, ডঃ মনীন্দ্রমোহন বসু, ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্ত, ডঃ তাঁরাপদ মুখার্জী, ডঃ অতীন্দ্র মজুমদার প্রমূখ পণ্ডিত ব্যক্তিরাও বাংলা ভাষাকে তাদের সময়ে নানান ভাবে সমৃদ্ধ করে গেছেন কিন্তু তাদের নাম মুখে আনতে আমরা বরাবরই হীনতার পরিচয় দিয়ে আসছি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হয়তো সে অর্থে হয়তো তেমন কোন নতুন শব্দের সৃষ্টি করে যান নি। তবে তিনি যা করে গেছেন তা-ই হলো একটা ভাষা সমৃদ্ধ করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আমরা সবাই জানি সংস্কৃত ভাষার গর্ভেই বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। পৃথিবীর কোন ভাষা-ই কোন একজনের হাত ধরে সৃষ্ট হয়নি। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাষার সমন্বয়ে একটা ভাষা গড়ে উঠে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ব্যবহৃত একমাত্র ভাষা হলো ইংরেজী। আমরা এই ইংরেজী ভাষাতেও ল্যাটিন, স্প্যানিশ, গ্রীক, পর্তুগীজ সহ অনেক ভাষার সংমিশ্রণ খোঁজে পাই। এভাবেই পরিপূর্ণ হয়ে উঠে একটা ভাষা। কাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলীতে আমরা বিভিন্ন ভাষার সমন্বয় দেখেছি। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের মতো আর কোন কবিই এখন পর্যন্ত এতো সংখ্যক ভিনদেশী ভাষার সংমিশ্রণ করার ক্ষমতা দেখাতে পারেন নি। অথচ এই মহান কবিকে আমরা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ আর জাতীয় কবির খেতাব দিয়েই যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন যে যার মতো করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম দিন কিংবা মৃত্যু বার্ষিকী পালন করলেও সরকারী ভাবে পালন করা হয়না জাতি হিসেবে এর চাইতে লজ্জার আমাদের আর কি হতে পারে ?
নতুন শব্দ তৈরীর বিপক্ষে আমি নই। ফ্রিজ, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ব্লেন্ডার, ওভেন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারসহ আমাদের ঘরে নিত্য ব্যবহার্য্য অনেক যন্ত্র আছে যেগুলোর সঠিক বাংলা এখনো আমরা করতে পারিনি, এসব যন্ত্রকে চিহ্নিত করতে এখনো আমাদেরকে ভিনদেশী ভাষার উপর নির্ভর করতে হয়। টেলিভিশনকে কেউ কেউ দূরদর্শন যন্ত্র বলে চালাতে চান কিন্তু দূরদর্শন শব্দটা ত হিন্দী। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন ভারতের জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের নাম দূরদর্শন। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি যদি ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে এই বঙ্গদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কেউ কি আমাকে বুঝিয়ে বলবেন ডিজিটালের প্রকৃত বাংলা কি ? কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি আরোও শ'খানেক সমার্থক শব্দ তৈরী করে যেতেন তাহলেও কারো মাথা ব্যথা হতো না। বর্তমান যুগের বড় বড় ডিগ্রিধারীরাও যদি কোন প্রচলিত শব্দকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এদিক সেদিক করেন তাহলেও কারো মাথা ব্যথা দেখিনা বরং তারা বাহবা পেয়ে থাকেন কিন্তু আমার মতো স্বশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত কেউ যদি কোন বাক্যে প্রীতিভাজনের স্থলে প্রিয়ভাজন শব্দ ব্যবহার করে তবে অনেক প্রিয়জনেরও রোষানলে পড়তে হয়। এর একটাই কারণ আমার ভাড়ারে বড় বড় বিদ্যার ছাড়পত্র নেই আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে বাংলা বর্ণমালার আবিষ্কারক শ্রী পঞ্চাণন কর্মকারের ভাড়ারে কতটা ডিগ্রির সার্টিফিকেট ছিলো। আমার শ্রদ্ধেয়/শ্রদ্ধেয়া বিদগ্ধ পাঠক বন্ধুগণের কাছে অবোধের মতোই এই প্রশ্নটা রেখে গেলাম আশা করি কারো না কারোর কাছ থেকে উত্তরটা পেয়ে যাবো।
আমরা যদি অঞ্চল ভিত্তিক বা আঞ্চলিক ভাষার প্রতি নজর দিই তাহলে দেখা যায় চট্টগ্রামের লোকজন 'র'-কে সাধারণত 'ল' উচ্চারণ করে থাকেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আমি বছর তিনেক আগেও পেশাগত কারণে প্রায়ই চট্টগ্রামে যেতাম। একবার চট্টগ্রামে গেলে কোন এক দোকানে একটা "রেড লিফ" কলম কিনতে গেলে দোকানী জানালেন তার দোকানে এই ব্র্যান্ডের কলম নেই। তখন পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক 'লেড লিফ' উচ্চারণ করায় দোকানী আমাকে বললেন লেড লিফকে আমি রেড লিফ বললাম কেন ? আমি কোন মতে কলমটা কিনে কেটে পড়ি। নোয়াখালীতে 'প'-কে সাধারণত 'হ' বলা হয়। যেমন শুদ্ধ বাংলায় 'পানি' আর নোয়াখালীর ভাষায় সেটা হয়ে যায় 'হানি'। একবার অন্য কোন এক জেলার ভদ্রলোক প্রথমবার নোয়াখালীতে গেলেন নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন 'প'-কে 'হ' বলা হচ্ছে। একদিন তিনি কাঁচা বাজারে গেলেন তরকারী করতে। তরকারী কিনতে গিয়ে তিনি পড়ে গেলেন বেশ ঝামেলায়। কারণ ভদ্রলোকের স্ত্রী বলেছেন পেঁপে কিনে আনতে। তিনি খানিক্ষণ ভেবে তরকারী বিক্রেতাকে বললেন 'ভাই আমাকে এক কেজি হেহে দিন'। আমরা যদি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার দিকে লক্ষ্য রাখি তবে সেখানে দেখা যায় ক এবং খ, গ এবং ঘ, ত এবং থ, দ এবং ধ এসব অক্ষরের উচ্চারণগত কোন তফাৎ নেই। তবে ক্ষেত্র বিশেষে 'খ' এর উচ্চারণ এমন ভাবে করা হয়ে থাকে যা প্রকৃত বা জন্মগত সিলেটি না হলে তার পক্ষে উচ্চারণ করা খুবই কষ্টসাধ্য। সিলেটের কোন এক স্কুলে ভিন্ন জেলার এক শিক্ষক ছাত্রদেরকে ইংরেজী পড়াচ্ছিলেন। শিক্ষক মহোদয় ক্লাসের মধ্য থেকে একজন ছাত্র দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন...
শিক্ষকঃ বলতো বাবা Horse এর বাংলা কি ?
ছাত্রঃ গুরা।
শিক্ষকঃ গুরা !! আচ্ছা। এবার বলো Turn বাংলা কি ?
ছাত্রঃ গুরা।
শিক্ষকঃ (কিছুটা রেগে বললো) তাহলে Powder এর মানে কি ??
ছাত্রঃ গুরা।
শিক্ষকঃ (এবার পুরোপুরি রেগে গিয়ে বললেন) সব কিছুই কি গুরা নাকি ???
ছাত্রঃ না স্যার, একটা চড়ার গুরা, একটা মুরাইন্না গুরা, আর শেষের টা একদম গুরা-গুরা !!
একই শব্দের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার কেবল সিলেটের আঞ্চলিক ভাষাতেই নয় বরং বিশ্বের অনেক ভাষাতেই দেখা যায়। আমরা যদি ইংরেজী ভাষার দিকে তাকাই তাহলে দেখি সেখানে How শব্দটা বাক্যের উপর নির্ভর করে কেমন, কিভাবে, কত অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর আমাদের বাংলা ভাষায় আমার জানামতে চোখের সমার্থক শব্দই আছে সাতটা অক্ষি, আঁখি, চক্ষু, চোখ, নয়ন, নেত্র, দৃষ্টি। পানির সমার্থক শব্দও নেহায়েত কম নয় পানি, জল, বারি, নীর, সলিল ইত্যাদি। তেমনি ভাবে অন্যান্য শব্দের সমার্থক শব্দও সীমাহীন। আমার ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি থেকে যতটুকু মনে পড়ছে তা হলো অনেকের মতো আমিও স্কুলের গণ্ডিতে পা রাখার আগেই ঘরে বসেই আদর্শ লিপি পড়েছিলাম। যেখানে একই 'ব'-কে দুইবার ব্যবহার করা হয়েছিলো। যেমনঃ প,ফ,ব,ভ,ম আবার য,র,ল,ব,শ। এই ব-এর বাহুল্যতা কচি বয়সেও আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলিছিলো। যদিও এখন প্রথম সারির 'ব' ঠিকে থাকলেও দ্বিতীয় সারির 'ব'-কে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলা হয়ে গেছে। আর 'ঋ' এর পরে কাঠ বিড়ালীর লেজের মতো '৯' "লি" আমাদের বর্ণ মালা থেকে উধাও হয়ে গেছে কারণ ছাড়াই। কঙ্গোর বর্ণমালাতে মাত্র ১১টা অক্ষর আছে। এই ১১টা অক্ষর দিয়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে কঙ্গোবাসীদের কোন সমস্যা হয়না। অন্যদিকে পাঁচ লক্ষ্যেরও অধিক শব্দের ভাষা ইংরেজী। এই ইংরেজীতেও মাত্র ২৬টা অক্ষর আছে। অথচ আমাদের বর্ণমালাতে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিয়ে আছে ৪৯টি শুধু তাই নয় আকার, ইকারসহ ও বিভিন্ন যুক্তাক্ষর গণনায় যুক্ত হলে এই সংখ্যা সেঞ্চুরী হাঁকাতে পারে। যে কারণে আমাদের বাংলা বর্ণমালার অক্ষরগুলি শতকরা ৮০জন ক্রমানুসারে বলতে পারেন না। বিশ্বাস না হলে আপনি একটা জরিপ চালিয়ে দেখে নিতে পারেন। অথচ যে কেউই ইংরেজী বর্ণমালার A থেকে Z পর্যন্ত এক নিঃশ্বাসে বলে দিতে পারবে এটা কি আমাদের জন্য লজ্জাজনক নয় ?
আমি লিখতে বসেছিলাম বানানের প্রচলিত সমস্যা নিয়ে তাই এই নোটের শিরোনামও ঠিক করেছিলাম "বানান বিড়ম্বনা" কিন্তু লিখতে বসে বানান বিড়ম্বনার বাইরেও প্রসঙ্গক্রমে অনেক বিষয় যুক্ত হয়ে গেছে। তাই শিরোনামও পাল্টে দিয়েছি। অনেকেই হয়তো আমার এই নোটের ঘোর বিরোধীতা করতে পারেন যথার্থ কারণেই। আমার এই নোট হয়তো অনেকের কাছে পীড়াদায়ক হতে পারে তাই আমি তাদের কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আশা করি আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বরাবরেই মতোই। তবে শেষ কথা যা বলতে চাই তাহলো আমরা এই বানান বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি চাই। আমার বিবেচনায় বানানের এই জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা পথ খোলা আছে আর তা হলো, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, এবং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সর্ব সম্মতিক্রমে এক বানানরীতি ও তার ব্যাকরণ তৈরী করবেন। এবং বানান বিড়ম্বনা এড়াতে প্রয়োজন সাপেক্ষে কিছু অক্ষরও বাদ দেয়া যেতে পারে। যাতে তিন 'শ' (শ, ষ, স) তিন 'জ' (জ, ঝ, য) তিন 'অ' (অ, ও, য়) দুই 'ন' (ন, ণ) দুই 'ত' (ত, থ) ইত্যাদি এসব ছাড়াও আকার, ইকার, হ্রস্ব ইকার, দীর্ঘ ইকার, হ্রস্ব উকার, দীর্ঘ উকার, ঋকার, একার, ঐকার, ওকার, ঔকার, যফলা, রফলা, রেফ নির্ধারণে যেন আমাদেরকে বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। বানানের এসব জটিলতা দূর করা গেলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আরোও উন্নত হতে সহায়ক হবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ শিক্ষিতরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজের মনে ভাব প্রকাশ করতে পারবে।
Comments